Yavuz : The Absolute Shehzade

 


Hadim-ul Harameyin-sherifeyin, Sultan Al-Hilafet, Sultan-i Uc Al-Kita, Kayseri Rum, Padishah, Melik-i dogu ve bati, Iftihar-i Aliyye Osman, Saye-i Ilah Sultan Yavuz Selim Han Hazretleri.

অবাধ্য গম্ভীর বা ইয়াভুজ সেলিম ছিলেন  উসমানীয় সম্রাজ্যের ৯ম সুলতান এবং প্রথম উসমানীয় খলিফা। তবে তিনি শুধু উসমানীয় সম্রাজ্যই নয় বরং ছিলেন সমস্ত বিশ্বের এক মহান শাসক বা সম্রাট ।

১০ অক্টোবর, ১৪৭০ খ্রিস্টাব্দ, তখনও সুলতান মুহম্মদ আল ফাতিহ ছিলেন উসমানীয় সুলতান।সেইদিনে তার ছেলে আমাসিয়ার সাঞ্জাক বে শাহাজাদা বেয়াজিদের এক দাসী ও দুলকাদির রাজ্যের শাহাজাদী গুলবাহার হাতুনের গর্ভে জন্মগ্রহন করে শাহাজাদা সেলিম। ছোট্ট সেলিম ছিলেন ভবিষ্যৎ সুলতান দ্বিতীয় বেয়াজিদের ১৩তম সন্তান এবং ৪র্থ শাহাজাদা। বুলবুল হাতুন শাহাজাদা বেয়াজিদের নিতান্তই প্রিয় বলে তার নিকট শুরু হতেই বুলবুল হাতুনের গর্ভে জন্ম নেওয়া শাহাজাদা আহমেদের গুরুত্ব ছিল অনেক বেশি।

Yavuz Sultan Selim Portrait.


ছেলেবেলা হতেই শাহাজাদা সেলিমের মাঝে ছিল শাসক হওয়ার ছাপ। তৎকালীন সময়ের একটি প্রচলিত কথা রয়েছে, 

তখন বয়স ছোট্ট সেলিমের ৫। তার বাবা শাহাজাদা বেয়াজিদ লালাদের সঙ্গে নিয়ে তীরন্দাজ অনুশীলন করছিলেন। তখন হঠাৎ এক কোন হতে তার বাবার অনুশীলনের টার্গেটে একটি তীর ছুড়ে আসে। সকল দেহরক্ষী কোনো প্রকারের আতঙ্কা আক্রমন ভেবে সারুহান শাহাজাদা বেয়াজিদকে ঘেরাও করে ধরলে পরে দেখতে পায় ধনুক হাতে ছোট্ট সেলিম দারিয়ে। তখন বাবা বেয়াজিদ বুঝতে পারে যে তীরটি তার ছেলের হাতে ছোড়া। তাই বেয়াজিদ ছেলের উদ্দেশ্যে বলেন 'পুত্র আমার তুমি ধনুক হাতে কি করছো? যাও বড় ভাইদের সাথে খেলা করো আর পড়াশুনা করো।' উত্তরে সেলিম বলে ' বাবা আমি শিখতে চাই' তখন বাবা জবাব দেয় 'যখন তোমার বয়স হবে তখন সবই শেখা যাবে এখন যে তোমার ভাইদের খেলাধুলার বয়স '। তখন আবার সেলিম বলেন 'কিন্তু বাবা আমি যে ভাইদের মতো জানতে চাই না।আমি যে অনেক জানতে চাই। আর হোজা বলেছেন, সব জানতে অনেক সময় লেগে যাবে। এক জীবনও কম পরতে পারে। আর আমি এক জীবনেই সব শিখতে চাই'। এ শুনে শাহাজাদা বেয়াজিদ সহ সকল লালা অবাক হয়ে যায়।

এরকম আরো অনেক লোককথা রয়েছে তার ব্যাপারে। অনেক ইতিহাসবিদের মতে ইয়াভুজ সেলিম একই সঙ্গে বিজ্ঞান এবং দর্শনশাস্ত্রে শিক্ষাগ্রহন করে। পরে ১৪৮৭ সালে তার ১৭ বছর বয়স হলে উসমানীয় শাহাজাদাদের প্রশিক্ষণ নীতির কারনে তাকে অন্যান্য ভাইদের মতো ট্রাবজন সাঞ্জাকে বে হিসেবে প্রেরিত করা হয়৷ অন্যদিকে সুলতান দ্বিতীয় বেয়াজিদের প্রিয়পুত্র আহমেদ কে আমাসিয়া (পূর্ব আনাতোলিয়ার মূল শহর) সাঞ্জাকে বে হিসেবে এবং শাহাজাদা কর্কুতকে সারুহান সাঞ্জাক বা মানিসায় প্রেরন করা হয়। যা শাহাজাদা সেলিম উজির সহ জনগনের মনোক্ষুণ্ণতা সৃষ্টি করে। কেননা ট্রাবজন ছিল সিমান্তবর্তী গুরুত্বহীন এবং শাহাজাদার জন্য ঝুকিপূর্ণ এক সাঞ্জাক।

Trebizond Sancak (Modern day Trabzon) in yellow.

তবে ঝুকিপূর্ণ এই সাঞ্জাকে যেন জনগনসহ লালা, কাজী এবং সকলের প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন সেলিম তার সাহসিকতা ও যোগ্যতার বলে। বেশ কিছু ক্রীতদাস অভিযান, নেতৃত্বের গুণ, অসাধারণ যুদ্ধনীতি, এবং নিজেও ভালো যোদ্ধা হওয়ায় তার সুনাম দিন দিন সম্রাজ্য সহ বাহিরে ছড়িয়ে যেতে থাকে। তখনই তার সাথে বিয়ে হয় ক্রিমিয়ান খানাতের শাহাজাদী হাফসা সুলতানের সঙ্গে। যা ছিল উসমানীয় সম্রাজ্যের কোনো সুলতান/শাহাজাদার অন্য কোনো মুসলিম রাজ্যের শাহাজাদীর সঙ্গে সর্বশেষ বিয়ে।

১৮ বছর শাসনে একজন যোগ্য উত্তস্বরী হিসেবে গড়ে উঠেছিলেন ইয়াভুজ সেলি। অন্যদিকে, তৎকালীন সময়ে সাফাভী সম্রাজ্য অতি দ্রুততার সঙ্গে বিস্তার করছিল, আর সুন্নি মুসলিমদের জোড়পূর্বক শিয়া মতবাদে রূপান্তর করছিল। তারই এক অংশ হিসেবে ১৫০৫ সালে, পারস্যের সম্রাট শাহ ঈসমাইলের ভাই ইব্রাহীম শাহ ৩০০০ সৈন্য সহ ট্রাবজনে আক্রমন চালায়। যেখানে অদম্য ইয়াভুজ তার কেবল ৪৫০ জন সৈন্য নিয়ে অন্য সকল সহায়তা ছাড়া আক্রমনের প্রতিরোধ করে এবং উক্ত যুদ্ধে দুর্ধর্ষ ভাবে সাফাভী দের পরাজিত করে। অসংখ্য সৈন্য বন্দী, অস্ত্র এবং গোলাবারুদ কেড়ে নেয়,আর যুদ্ধে গাছ কাটার মতো হত্যাযজ্ঞ তৈরি করে ইয়াভুজ বাহিনী। উক্ত যুদ্ধে "এরজিনচান" সাঞ্জাক পর্যন্ত সাফাভী বাহিনীকে তারা করে ইয়াভুজ সেলিম।

Yavuz Selim In battle Field.

আগেই বলে রাখি, ছোটবেলা হতেই ইয়াভুজ সেলিম ছিলেন অনেক রগচটা মানুষ। তার রাগের ভয়ে পুরো প্রাসাদ,সাঞ্জাক এবং পরবর্তীতে সম্রাজ্য কম্পিত হতো। সাফাভী বাহিনীর আক্রমণ ইয়াভুজ সেলিমকে অনেক রাগান্বিত করে তুললে সে একের পর এক সাফাভী গ্রাম ও সীমানাবর্তী এলাকাগুলোতে আক্রমন চালাতে থাকে। যাতে বিরক্ত হয়ে  পারস্যের সম্রাট শাহ ঈসমাইল তার একজন দূত প্রেরণ করেন ইয়াভুজ সেলিমের অভিযোগ নিয়ে সুলতান দ্বিতীয় বেয়াজিদের কাছে। যেখানে তিনি তার বন্দী সৈন্য আর অস্ত্র সব ফেরত চায়। তবে সেলিম হতে তা এনে ফেরত দেওয়া সম্ভব হবে না বলে দ্বিতীয় বেয়াজিদ অনেক উপহার ও অর্থ দিয়ে পাঠায় শাহ ঈসমাইলের নিকট। আর তার সাথে বন্ধুত্বের হাত বাড়ায়।

১৫০৭ সালে পুনরায় শাহ ঈসমাইল উসমানীয়দের অধীনস্থ দুলকাদির রাজ্যে অভিযানে বের হয়৷ এই স্বভাবতই দ্বিতীয় বেয়াজিদ ছিলেন একেবারে শান্তি প্রেমী, তাই তিনি এ বিষয়ে নাক গলাতে চান নি। তবে নানার রাজ্য আবার নিজেদের অধীনস্থ একটি ভূমিতে আক্রমণ আবারও রাগান্বিত করে তোলে ইয়াভুজ সেলিমকে। আর এর জেড়ে ইয়াভুজ সেলিম "এরজিনচান" সাঞ্জাকে অবস্থিত সাফাভীদের বিরুদ্ধে আক্রমন চালায় এবং পুনরায় উক্ত অভিযানে হারিয়ে পালাতে বাধ্য করে সাফাভীদের। এই ছিল ইয়াভুজ সেলিমের তার চিরশত্রু শাহ ঈসমাইলের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ।

ঠিক পরের বছরের মধ্যেই তিনি ককেশাস ও দুই ভাগে বিভক্ত সম্পূর্ণ জর্জিয়া কে উসমানীয় সম্রাজ্যের অধীনস্থ করেন। যে অভিযান গুলোতে তিনি ধারনা করা হয় কমপক্ষে ১০ হাজার জর্জিয়ান নারী-পুরুষকে দাস হিসেবে নিয়ে আসেন।

এভাবে একে একে নিজের প্রভাব সম্রাজ্যে বিস্তার করে যান শাহাজাদা ইয়াভুজ। পর পর দুইবার পরাজয় ক্ষিপ্ত করে তোলে পারস্যের শাহ-কে। যার কারনে সে আবার ১৫১০ সালে ভাই ইব্রাহীম শাহ-কে সেনাপতি করে এক বিশাল বাহিনী প্রেরণ করে সেলিমকে পরাজিত করে ট্রাবজন দখল করতে। আবারও সংখ্যায় বেশি হওয়া সত্ত্বেও পরাজিত হয়ে ফিরে যায় সাফাভী সম্রাজ্য। আর তৃতীয়বারের মতো বিজয় শাহাজাদা ইয়াভুজ সেলিমকে করে তোলে অনেক বেশি আত্ববিশ্বাসী এবং সমস্ত বিশ্বে বিখ্যাত।

Yavuz Selim In Battle

উক্ত যুদ্ধ উসমানীয়-সম্রাজ্য এবং সাফাভীদের মধ্যে বিবাদ বাড়িয়ে দেয়। যা অপছন্দ হয় শান্তিপ্রিয় সুলতান বেয়াজিদের। তবে ইয়াভুজ সেলিম এইসকল কারনে হয়ে ওঠে সম্রাজ্য সহ বিশ্বের জন্য এক ভীতির কারন।
তার পূর্বে এবং পরেও কোনো উসমানীয় শাহাজাদা এমন সাফল্য এবং বিজয় অর্জন করেনি বলে মনে করেন বিখ্যাত তুর্কি ইতিহাসবিদ 'ইয়াভুজ বাহাদিরোগলু'। আগামী পার্টে তার সিংহাসনে আহরনের ইতিহাস থাকবে । ধন্যবাদ।


source : 
1. " Encyclopedia of The ottoman Empire " by Gabor Agoston

2. " Resimli Osmanli Tarihi " by Yavuz Bahadiroglu

3. "Uc kitanin sultan Yavuz Selim " by Yavuz Bahadiroglu