Lilith : The Women Who Came Before Eve.


হ্যা,শিরোনামে ঠিকই দেখেছেন। আমাদের আজকের বিষয় সৃষ্টিকূলের প্রথম নারী লিলিথ। 

আমরা তানাখ, আদিপুস্তক, কোরঅান, হাদিস ইত্যাদি সকল একসত্তায় বিশ্বাসী ধর্মালম্বীরাই এই সূত্রে বিশ্বাস করি যে আদিতে ঈশ্বর/আল্লাহ আদম এবং হাওয়া/ইভ কে সৃষ্টির মাধ্যমে করেছেন মানবজাতির সূচনা। তবে আজকের বিষয়টি এতে কিছুটা ভিন্নতা আনবে। তবে প্রথমেই বলে রাখি এটি কেবল একটি আদি পৌরানিক গ্রন্থাবলী হতে গ্রহণকৃত সূত্র। বাস্তব/সৃষ্টিকূলের সাথে এর কোনো সম্পর্ক আছে কিনা আজও তা একটি দ্বিধা মাত্র।

Lady Lilith by Dante Gabriel Rossetti.

" লিলিথ " হচ্ছে প্রাচীন মেসোপটোমিয় এবং ইহুদি পৌরাণিক একটি চরিত্র, যে বিকল্পধারার ইতিহাসে আদম বা সৃষ্টির প্রথম মানবের প্রথম স্ত্রী এবং ধারনাকৃত প্রথম ও আদিম নারী-শয়তান। বেশ কিছু আদি-ইহুদি লোককাহিনীতে লিলিথের আলোচনা করা হয়েছে। হিব্রু ভাষায় লিখিত বাইবেলের "বুক অফ ইসায়া" এর ৩৪ অধ্যায়ের ১৪ তম আয়াতে লিলিথের নাম পাওয়া যায়। যদিও বর্তমান ইংরেজি বেশিরভাগ অনুবাদে অর্থ বদলে একে নানা প্রাণীর সঙ্গে তুলনা করা হয়। ম্যান্ডিয়ান পৌরণিক নানা প্রাচীনতত্ত্বসহ ইহুদিদের পৌরণিক নানা গ্রন্থ, ব্যাবিলনীয় তালমুদ এর (এরুভিনঃ১০০বি, নিদ্দাহঃ ২৪বি, শাব্বাথঃ ১৫১বি, বাবা বাথরা ৭৩এ), বাইবেলের বহিরাগত অংশ "বুক অফ এডাম এন্ড ইভ" এ আদমের প্রথম স্ত্রী হিসেবে, এছাড়াও হিব্রু ভাষায় লিখিত বাইবেলের আদি-পুস্তকের আরো নানা জায়গায় তার উপস্থিতি পাওয়া যায়। আহমেদ আল বুনি একাধারে গনিতবিদ, দার্শনিক, আধ্যাত্মিকতা এবং জাদুবিদ্যা নিয়ে লেখালেখিতে বেশ খ্যাতিমান ছিলেন। তার লিখা "মহান জ্ঞানের সূর্য" বইয়ে 'সন্তানদের মা' হিসেবে কারিনাহ নামে এক জীনের বর্ননা করা হয় যাকে লিলিথের সাথে তুলনা করা যায়। এছাড়াও নানা আরবী লোককাহিনীতেও কারিনাহ নামের এই জীনের কল্প কাহিনী শুনা যায়। 

Queen Of Nights/Underworld, Old-Babylonian
Terracotta.

Photographic reproduction of the Great Scroll of Isiah,
Where the plural word of Lilith (Lilliyot) was mentioned.

এখন আসি সকল গ্রন্থ,সূত্র,প্রমানের সাথে তার যে প্রথম মিল পাওয়া যায় তা নিয়ে আলোচনায়। লিলিথ চরিত্রটি সকল গ্রন্থেই আদমের প্রথম সঙ্গী হিসেবে পাওয়া যায়। ইহুদি অনেক পৌরাণিক গ্রন্থে তাকে বলা হয়েছে "একজন গরম জলন্ত নারী যিনি প্রথম পুরুষের সাথে সহবাসে জড়িত হয়েছিলেন"।

a fanart of Lilith

এখন নানা দ্বীনের ব্যাখ্যায় তার এই ঘটনার ব্যাখ্যা দেই। প্রথমে আসি ইসলাম বাদে অন্য সকল গ্রন্থ এবং সূত্রে। সে সকল জায়গায় উল্লেখিত আছে  "লিলিথকে এবং আদমকে একই সাথে সৃষ্টি করা হয় একে অপরের সঙ্গী হিসেবে। অতঃপর সকল দিকে স্বর্গে আদম অর্থাৎ পুরুষের ক্ষমতার আধিক্য দেখে সে তা মেনে নিতে চায় না। সে প্রতিবার আদমের আদেশ অথবা কথার অবাধ্য হলে তাকে স্বর্গ হতে বহিষ্কার করা হয়। তখন সে ডেভিল অর্থাৎ শয়তানের দলে গিয়ে যোগ দেয়।  অনেক বাইবেল ব্যাখ্যাকারীর মতে যেহেতু ডেভিল/শয়তান সর্বদার জন্যই স্বর্গ হতে বিতারিত সৃষ্টি ছিল তাই অজগরের রূপে স্বর্গে প্রবেশ করে আদম ও ইভকে বিভ্রান্ত এই লিলিথই করেছিল তার প্রতিশোধের অংশ হিসেবে। আর স্বর্গ ছাড়ার পর হতে সে আর ডেভিল তাদের বংশ বিস্তার করা শুরু করে যেন মানবজাতিকে সর্বদা বিভ্রান্তিতে রাখতে পারে।"

Lilith, illustration by Carl Poellath from 1886 or earlier.

এখন আরবী এবং মুসলিম সেই লেখকের আলোকে যদি কারিনাহ নামক সেই জীনকে তুলে ধরি তাহলে আমরা দেখতে পাই " একদা কারিনাহ নামন এক জীন আদম (আ.) কে প্রলোভিত করতে আসলে সে তাকে না করে। সে যতই চেষ্টা করে সফল হতে পারে না। ফলে সে ইবলিশের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে। আর তারা একে একে নানা শয়তানের জন্ম দেয় যাদের তাদের প্রতিশোধের জন্য প্রস্তুত করে।"

Lilith and Samael (Devil), Art by
Asenath Mason.

এছাড়াও আরবী, ইহুদি সহ নানা সম্প্রদায়ের বিশ্বাস মতে, লিলিথ/কারিনাহ নামক এই চরিত্র আজও নানা সময় আদম সন্তান অর্থাৎ পুরুষদের স্বপ্নে বা নানাভাবে প্রলোভিত করে থাকে, গর্ভবতী মায়েদের সন্তান ছিনিয়ে থাকে ইত্যাদি।

Medieval Hebrew amulet intended to protect a mother and her child from Lilith.

Adam clutches a child in the presence of the child-snatcher Lilith. Fresco by Filipinno lippi, basilica of Santa Maria Novella , Florence

সকল কল্পকাহিনী এবং কাব্যের ঘটনা তুলে ধরার পর এখন বলবো বর্তমান সমাজে তার প্রভাব সম্পর্কে। বর্তমান পশ্চিমা সমাজে এখন আর তাকে শয়তান বা মানবের শত্রু বলে গণনা করা হয় না। এখন তাকে অনেক পশ্চিমা নারীবাদীরাই "সৃষ্টির প্রথম নারী জাগরণের অগ্রদূত" বা "প্রথম নারীবাদী" বা নারী অধিকারের জন্য প্রতিবাদী প্রথম নারী বলে থাকে। বর্তমান বিশ্বে লিলিথ কেবল একটি পৌরণিক চরিত্র নয়, লিলিথ এখনের ঐতিহ্য, পশ্চিমা সংস্কৃতি, সাহিত্য, ভৌতিক, জাদু ইত্যাদি চরিত্র। বর্তমান যুগে অনেকেই তাকে সঠিক বলে মনে করেন। আবার নানা কাব্যে অথমা সম্প্রদায়ের কাছে তিনি একজন দৈবীরূপ হিসেবেই চিহ্নিত। ইংরেজ জাদুকর, কবি, লেখক, চিত্রকর এলেইস্টার ক্রোউলি তার এক বইয়ে লিলিথকে নিয়ে লেখা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকেন নি, সে তার বড় সন্তানের নামও লিলিথ রেখেছিলেন। এছাড়াও অনেকে লিলিথকে ইলুমিনাতি নামক এক গুপ্ত সংগঠনের দেবী হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। এছাড়াও নানা গান, গেমস, চলচিত্র, কাব্য, নাটক সহ সমস্ত বিশ্বে তার অনেক বেশি খ্যাতি রয়েছে।

এখন লিলিথকে আমরা ধার্মিক দিকে হোক চেয়ে সাংস্কৃতিক দিকে, কোনো দিকেই উপেক্ষা করতে পারবো না কেননা দিনে দিনে এই চরিত্রের প্রভাব পৃথিবীতে যেন বেড়েই যাচ্ছে।


Source:

1. Babylonian Talmud (b. Erubin 18b; b. Erubin 100b; b. Nidda 24b; b. Shab. 151b; b. Baba Bathra 73a–b

2. Old Testament (Book of Isiah 34:14)

3. Book of Adam and Eve

4. Leviticus (19a)

5. De-demonising the Old Testament : an investigation of Azazel, Lilith, Deber, Qeteb and Reshef in the Hebrew Bible (by Judit M belair)

6. Book of Genesis (1:27, 2:22)

7. The Coming of Lilith: A Response