মুহররম, আরবী বছরের প্রথম মাস। এই মাসকে মুসলিম উম্মতের মধ্যে নানাভাবে পালন করা হয়ে থাকে। শিয়া-সুন্নি ভেদেও এই মাস পালিত হয়ে থাকে। আর উক্ত মাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন ১০ই মুহররম বা আশুরার দিন। এই দিনটিকে কেবল মুসলিমরা-ই না বরং ইয়াহুদী, খ্রিস্টানরাও পালন গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
মুহররমের ১০ তারিখে ঘটে যাওয়া ইতিহাসের বিশেষ কিছু ঘটনা তুলো ধরবো আজ। সেই সঙ্গে এক ভবিষ্যৎবাণীও উল্লেখ করবো।
ইমাম আল-গাযালী তার "মুকাশফাত আল-ক্বুলুব" গ্রন্থে লিখেছেন, একদা উমর ফারুক ইবনুল খাত্তাব (রা.) কে "আশুরার গুরুত্ব" নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি উত্তরে বলেন,
• আল্লাহ আকাশ এবং জমিন আশুরায় সৃষ্টি করেছেন।
• আল্লাহ জিবরাইল (আ.) কে আশুরার দিনে সৃষ্টি করেছেন।
•আল্লাহ আদম(আ.) এবং হাওয়া (আ.) কেও আশুরার দিনেই সৃষ্টি করেছেন।
• আল্লাহ জান্নাত এই দিনেই সৃষ্টি করেছেন এবং জান্নাতে আদম (আ.)-কে এই দিনেই প্রবেশ করিয়েছেন।
•পৃথিবীতে প্রথমবারের মতো বৃষ্টিও আশুরার দিনেই হয়েছিল।
তাই উমর (রা.) এই আশুরার দিনকে এতটা গুরুত্বপূর্ণ বলেছেন।
ইবনে কাসিরের "আস-সিরাহ" তে আল-হাফিয ইবনে আসাকির থেকে বর্ণিত হয়েছে, আশুরার দিনেই আমিনা বিনতে ওয়াহাব তার গর্ভে বিশ্বনবী হযরত মুহম্মদ (স.) এর আসার খবর পেয়েছিলেন।
![]() |
| An Illustration of Moses Parting Red Sea And Saving His People. |
১০ই মুহররম মুসলিম জাতিসহ ইয়াহুদী ও খ্রিস্টান জাতির জন্য অত্যাধিক খুশির এক দিন হওয়ার কারন ইবনে আব্বাস থেকে হাদিসে এসেছে,
"একদা আশুরার দিনে মহানবী (স.) খেয়াল করলেন, মদিনায় অবস্থানরত ইয়াহুদীরা সাওম পালন করছে। তখন তিনি ইয়াহুদীদের জিজ্ঞেস করলেন, 'এই দিনে তোমরা কিসের সাওম পালন করছো?' উত্তরে ইয়াহুদীরা বললো, 'আজকের এই মহান দিনেই আল্লাহ মুসা (আ.) ও তার লোকদের বাচিয়েছিলেন,এবং ফিরাউন ও তার লোকদের ডুবিয়ে দিয়েছিলেন। আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উদ্দেশ্যে মুসা (আ.) সাওম পালন করেছিলেন, তাই আমরাও এই দিনে সাওম পালন করে থাকি।' মহানবী (স.) বললেন, ' আমরা তোমাদের চেয়ে মুসা (আ.)-এর বেশি নিকটবর্তী।' অতঃপর এই দিনে তিনি সাওম পালন করলেন এবং মুসলিমদের সাওম পালনের আদেশ দিলেন।
(সহিহ বুখারী- ২০০৪, সহিহ মুসলিম -১১৩০)
![]() |
| An Illustration of Battle of Karbala. |
এসব ছাড়াও আশুরার দিনে ঘটে গেছে ইসলামের এক মর্মান্তিক ঘটনা। ইসলামের ইতিহাসে হৃদয়বিদারক এক কলঙ্ক অর্থাৎ আশুরার দিনেই ইসলামের দ্বিতীয় ফিতনার সবচেয়ে ঘৃণ্যতম কাজ করা হয়। কারবালার যুদ্ধে উবাইদ-আল্লাহ বিন জিয়াদের কাছে হযরত মুহম্মদ (স.) এর আদরের নাতি হযরত হুসেইন (রা.) তৃষ্ণার্ত অবস্থায় নির্বিচারে বেইমানির কারনে শাহাদাত বরন করেন। তাকে শিরোশ্ছেদ করে হত্যা করা হয়। আজীবন মুসলিম জাতি এই কষ্ট মনে বহন করে যাবে।
আনোয়ার আল-কাশ্মিরী তার "আল-আরাফ আশ-শাথি" গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, মহানবী (স.) এর ভবিষ্যৎবাণী অনুযায়ী কোনো এক শুক্রবার আশুরার দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে।
আরো অনেক ঘটনা আশুরার দিনে ঘটার ধারনা করা হয়। উক্ত সকল ঘটনাই আশুরার দিনে হওয়াকে বেশিরভাগ মানুষ কাকতালীয় মনে করলেও, অনেকে তা মনে করেন না। তবে সকল ঘটনা কাকতালীয় হোক বা না হোক আশুরার দিন মুসলিম জাতির জন্যই নয়, সমস্ত মানব জাতির জন্য এক মহান দিন। সুতরাং আমাদের সকলের এই দিনকে সম্মান করা উচিৎ।



Social Plugin