A Conquest For Wine ?!?


সাল ১৫৬৮, সবে মাত্র দীর্ঘ ৪২ বছর চলমান উসমানীয়-হ্যাবসবার্গ যুদ্ধের সমাধান হলো উসমানীয়দের বিজয় দিয়ে। সুলতান দ্বিতীয় সেলিম তখন উসমানীয় রাজগদিতে। হাঙ্গেরির বিজয় তাদের ইউরোপের অনেকটা ঝুকিপূর্ণ চিন্তাভাবনা থেকে প্রশান্তি দিয়েছিল। তাই ঠিক ওই বছর সুলতান দ্বিতীয় সেলিম স্পেনে চলমান "মোরিস্কো বিদ্রোহ" তে উলুচ আলি পাশাকে এবং অন্যদিকে ভারত মহাসাগরের নানা যুদ্ধে পর্তুগীজ বাহিনীর বিরুদ্ধে তার সৈন্যসামন্ত প্রেরণ করে সম্পূর্ণ ইউরোপ ও এশিয়া তে দবদবা তৈরি করেন। তবে এগুলোরও পূর্বে, সিংহাসনে আহরনের পর থেকেই তার নজর ছিল একটি দ্বীপরাজ্যে, যার নাম সাইপ্রাস।

Map of Cyprus,Drawn by Johannes van Deutecom in 1573

তখন সাইপ্রাস ছিল ভেনিসের অধীনস্থ এক প্রজাতন্ত্র। আর বলা হয়ে থাকে সাইপ্রাসের মদ্য পুরো ইউরোপে বিখ্যাত থাকায় সুলতান দ্বিতীয় সেলিম যাকে সম্রাজ্যে মদ্যপায়ী সেলিম হিসেবেও চেনা যায়, এই উল্লেখ্য কারনেই তার ছিল সাইপ্রাসের প্রতি এক আকর্ষণ। তবে অনেকের মতে তার কাছের এক ইহুদী বন্ধু ও ব্যবসায়ী, ন্যাক্সোসের ডিউক জোসেফ নাসির পরামর্শে সেলিম দ্বিতীয় উক্ত প্রজাতন্ত্রের ওপর আকর্ষিত হয়। তৎকালীন সময়ে আবার উসমানীয়-ভেনিসীয় শান্তি চুক্তি চলমান ছিল। তাই এই আক্রমন তাদের শান্তিচুক্তি ও যুদ্ধনীতি নষ্ট করবে বলে চিন্তিত থাকে সুলতান দ্বিতীয় সেলিম। তখন উক্ত যুদ্ধে অধিক আগ্রহী প্রধান উজির সোকুল্লু মুহম্মদ পাশা অন্যান্য উজিরসহ শেখ-উল ইসলাম হতে ফরমান নেয়। যেখানে উল্লেখিত থাকে যেহেতু ৭ম শতকে সাইপ্রাস প্রজাতন্ত্র একটি মুসলিম ভুমি ছিল সেহেতু এতে আক্রমন করে ইসলামের ভুমি ফিরিয়ে আনা অন্যায় হবে না।

এরপর বেশ কিছু সময় সুলতান দ্বিতীয় সেলিম প্রস্তুতি ও নানা রকম বেগের জন্য সময় নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন পরিকল্পনায়। অতঃপর ২৭ জুন ১৫৭০ সালে ৮০ হাজার - ১.৫ লক্ষ সৈন্যশিবির সহ ৩৫০-৪০০ উসমানীয় জাহাজ সাইপ্রাস প্রজাতন্ত্র বিজয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।

Bust of Piyale Pasha

Guessed Portrait of Muezzinzade Sofu Ali Pasha.

Ottoman illustration of Lala Mustafa Pasha

অতিশীঘ্রই বিশাল উসমানীয় বাহিনী সাইপ্রাসের রাজধানী "নিকোসিয়া" এবং পার্শ্ববর্তী অন্যান্য দূর্গ অবরোধ করে। ভেনিস আগে থেকেই কিছুটা প্রস্তুতি নিতে উক্ত দূর্গ তৈরি সহ ছোট ছোট গ্যারিসন বানিয়েছিল। তবে কোনো কিছুই যেন কাজ করছিল না বিশাল এই উসমানীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে। এই অভিযানে জমিন যুদ্ধের নেতৃত্ব লালা কারা মুস্তাফা পাশা এবং নৌপথের নেতৃত্ব মুয়াজ্জিনজাদা সোফু আলী পাশা এবং তার প্রধান সহকারী হিসেবে পিয়ালি পাশাকে দেওয়া হয়। তাদের নেতৃত্বে উক্ত অভিযানে নিকোসিয়া ও পার্শ্ববর্তী সকল গ্যারিসন ও সাধারন জনগনের কম পক্ষে ২০ হাজার মানুষ নিহত হয়। ২ হাজারের মতো হেরেমের জন্য দাস বন্দী করা হয়। ৩ মাসের মধ্যেই অধিকাংশ ভুমি উসমানীয়দের আয়ত্তে চলে আসে।

Seige Of Nicosia Map in 1573

১৫৭০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর, তত সময়ে কম হলেও ৫৬ হাজার ভেনিসীয় লোক হয়তো নিহত নাহয় বন্দীদশায় ছিল। এখনো মরিস্কো বিদ্রোহ সহ অন্যান্য অরাজকতা চলায় ইউরোপের মূল শক্তি সমূহ সাইপ্রাসের সাহায্যে অগ্রসর হবার সুযোগ পাচ্ছিল না। এইদিকে উসমানীয়রা সর্বশেষ ভেনিসীয় শক্তি "ফামাগুস্টা" শহরের দ্বারপ্রান্তে ছিল। ফামাগুস্টা শহরের দূর্গে সর্বমোট ৯০ টি ছোট কামান, ৮৫০০জন প্রহরী এবং শহরের জেনারেল "মার্কো এন্টোনিও ব্রাগাদিন" ছিলো। পোপের লোকবল একত্র করে সাইপ্রাসে পাঠানো পর্যন্ত যে সময় লাগতো তত সময় এই ১৪৫ বন্দুক সহ ১ লক্ষের বেশি উসমানীয় সৈন্য শহরে প্রবেশ আটকে রাখা যেন ছিল এক কল্পনার বিষয়।

Depiction of the siege in 1574
বিশাল উসমানীয় বাহিনী শুরু করে শহরে তাদের বারুদের আক্রমন। অপরদিকে কোনো সহায়তাহীন ভেনিসীয় জেনারেল ব্রাগাদিন,পাফোস বন্দরের কাপ্তান লরেঞ্জো ট্রিয়েপোলো এবং ভেনিসীয় সাইপ্রাসের শেষ গভর্নর জেনারেল "এস্তোর ব্যাগলিওনি" তাদের ৮৫০০ সৈন্য নিয়ে রাজ্য রক্ষায় লেগে যান। বিশাল উসমানীয় বাহিনী দীর্ঘ ১০  মাস প্রতিনিয়ত নানা কৌশলে চালাতে থাকেন আক্রমন তবে সেই অল্প সংখ্যক সৈন্যের প্রহরা ভেঙ্গে তাদের শহরে প্রবেশ হয়ে উঠেছিল প্রায় অগম্য বিষয়। ১৫৭১ সালের জুলাই মাসের শেষের দিকে উসমানীয় বাহিনী কোনোমতে দূর্গে প্রবেশপথ বের করে।প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির পর আর গোলাবারুদ সহ সেনাবহর শেষের দিকে থাকায় ব্রাগাদিন ১ আগস্ট ১৫৭১ সালে আত্মসমর্পনের সুযোগ চায়। 
এভাবে উসমানীয়রা সম্পূর্ণ  সাইপ্রাস  বিজয় করে নেয়।
উক্ত যুদ্ধে উসমানীয়দের ২০ হাজারের মতো সৈন্য মারা যায়। তাদের মধ্যে বেশ কিছু বড় মাপের সৈন্যও ছিল। মুস্তাফা পাশার বড় ছেলেও মারা যায় উক্ত যুদ্ধে৷ তবে ভেনিসীয়দের দাবি উক্ত যুদ্ধে কমপক্ষে  ৫৩ হাজার উসমানীয় সৈন্য নিহত হয়৷

Source: 

1. The Ottoman Centuries (by Patrick Balfour)

2. The Seiges of Nicosia & Famagusta in Cyprus (by Uberto Foglietta)